মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া কমিশন-২০০৩
শিক্ষার গুণগতমান অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির লক্ষে ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন মার্চ ২০০৪ সালে তাদের প্রতিবেদন সরকারের নিকট দাখিল করে। কমিশনের প্রতিবেদনে শিক্ষার সকল সাব-সেক্টর এর তিনটি ভাগে মোট ৮৮০টি পরামর্শ প্রদান করা হয়। প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ :
পার্ট-১ |
সাধারণ শিক্ষা |
প্রাথমিক শিক্ষা |
|
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা |
|
উচ্চ শিক্ষা |
|
পার্ট-২ |
প্রেফেশনাল শিক্ষা |
কৃষি শিক্ষা |
|
প্রযুক্তি শিক্ষা |
|
মেডিক্যাল শিক্ষা |
|
পার্ট-৩ |
বিশেষায়িত শিক্ষা |
মাদ্রাসা শিক্ষা |
|
মূলধারার মহিলাদের জন্য শিক্ষা |
|
আই.সি.টি. শিক্ষা |
|
দূরশিক্ষা পদ্ধতি |
|
লাইব্রেরি এবং তথ্যবিজ্ঞান শিক্ষা |
প্রধান উদ্দেশ্য: স্বল্পতম সময়ে দেশের সকল জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে রূপান্তর করাই শিক্ষার মুল লক্ষ্য।
শিক্ষার অভিগম্যতা : জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে শিক্ষায় সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা ।
গুণগত শিক্ষা: শিক্ষার সকল স্তরে গুণগত মান বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ।
স্কুলে ভর্তির বয়স : শিশুর বষয় ৫ বছর অতিক্রম করলেই বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলে ভর্তি করা।
প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ: স্বল্পতম সময়ে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা।
শিক্ষক ও ছাত্র অনুপাত: শিক্ষক-ছাত্রের অনুপাত কমিয়ে আনার নীতি অনুসরণ করে প্রাথমিকে ১:৩০ শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত এবং মাধ্যমিক ১:৪০ শিক্ষক-ছাত্রের অনুপাতে নিয়ে আসা।
শিক্ষার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য: প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার স্তরে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূর্ব নির্ধারিত থাকতে হবে।
শিক্ষা কাঠামো: বিদ্যমান শিক্ষা কাঠামো নীতিগতভাবে মেনে চলা।
শিক্ষার বিভিন্ন ধারার মধ্যে সমন্বয়: শিক্ষার বিভিন্ন ধারার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কারিকুলামের বেশির ভাগ অংশ প্রণয়ন করা ।
একমুখী মাধ্যমিক শিক্ষা : একমুখী মাধ্যমিক শিক্ষা প্রবর্তন।
গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি: গ্রামাঞ্চলে Under Served এলাকায় নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা ।
গ্রামাঞ্চলে মডেল হাই স্কুল স্থাপন : স্বল্পতম সময়ে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল হাই স্কুল স্থাপন।
শিক্ষক নিয়োগ: বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিত বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ।
গুণগত শিক্ষা: শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা বিশেষ করে ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞানের শিক্ষকদের জন্য স্বল্পতম সময়ে বেশি শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনার জন্য দূর শিক্ষণ পদ্ধতি আবলম্বন করা।
শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার : প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়। এ উদ্দেশ্যে একটি টিভি চ্যানেল ব্যবহারের উল্লেখ করা হয়েছে।
জীবন ঘনিষ্ট শিক্ষা : মাধ্যমিক শিক্ষানীতি পদ্ধতি এমনভাবে প্রণয়ন করা যাতে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরা জীবনঘনিষ্ট শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
শিক্ষা ও মানবসম্পদ : মানবসম্পদ ব্যবহারের জন্য একটি জাতীয় পলিসি প্রণয়ন করা, যাতে করে শিক্ষিত বেকার তৈরি না হয়।
দূর শিক্ষণ : টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে দূর শিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার সুপারিশ করা হয়।
শিক্ষকের মর্যাদা: শিক্ষকদের বেতন স্কেল পদোন্নতি এবং চাকুরির অবস্থা এমন ভাবে নির্ধারন করা, যাতে করে সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি: এস.এস.সি পরীক্ষা ব্যতিত শিক্ষার সকল স্তরে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা। শিক্ষার্থীরা কি অর্জন করেছে তার উপর প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত এই পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন করা হবে।
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ : শিক্ষার প্রশাসনিক কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণ করার পদ্ধতি অবলম্বন করা। বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থার মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থাকবে না। স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যাবে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে দাপ্তরিক কাজের জন্য রাজধানী ঢাকা আসার প্রয়োজন হবে না।
তথ্য প্রযুক্তি : জাতীয় তথ্য প্রযুক্তি নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন : একমুখী বিশ্ববিদ্যালয় যেমন, কৃষি, প্রযুক্তি, চিকিৎসা বিদ্যা ইত্যাদি সরকারি অথার্য়নে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে নিরুৎসাহিত করা।
বেসরকারিখাতে উচ্চ শিক্ষা : উচ্চ শিক্ষা তুলনামূলকভাবে ব্যয় বহুল হওয়ার বেসরকারিখাতে উচ্চ শিক্ষাকে উৎসাহিত করা। কিন্ত বেসরকারিখাতে শিক্ষার গুণগতমান বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানিক পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নিরপেক্ষ প্রশাসন স্থাপন: ১৯৭৩ সালের আইন অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
গবেষণার জন্য প্রণোদনা : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিার সুপারিশ করা হয়;
ভাষানীতি : নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে একটি ভাষানীতি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়;
বিজ্ঞাননীতি : আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আলোকে দ্রুততম সময়ে একটি বিজ্ঞাননীতি প্রনয়েনের সুপারিশ করা হয়।
বিরতিহীন শিক্ষা : কমিশন সুপারিশ করে যে, টেকনোলজি ব্যবহার করে রেডিও, টিভি, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি ধারাবাহিক শিক্ষার মাধ্যমে জাতিকে শিক্ষিত এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা প্রদান করা যেতে পারে।
স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন : গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষা খাতের সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং সমাধানের উপায় বের করার জন্য এই কমিশন একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশ করে।