ভূমিকাঃ
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত দপ্তর হিসেবে কাজ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ইউনেস্কো/আইসেস্কোর সাথে লিয়াঁজো করার মাধ্যমে বিএনসিইউ বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। অন্যান্য দেশের জাতীয় কমিশনগুলোর মতই বিএনসিইউ চিন্তা ও ধ্যান ধারণার গবেষণাগার, মানদণ্ড নিরূপণকারী, ক্লিয়ারিং হাউস, নীতি নির্ধারনী বিষয়ক পরামর্শ প্রদান, বিশ্বব্যাপী জাতীয় কমিশনগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নোয়ন ও এর সক্ষমতা বৃদ্ধিকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে।
বিএনসিইউ এর গঠন/ সংগঠন কাঠামোঃ
পদাধিকার বলে শিক্ষা মন্ত্রী বিএনসিইউ এর চেয়ারম্যান এবং সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর মহাসচিব। এছাড়া বিএনসিইউতে একজন কমিশন সচিব (বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব), এবং তাঁকে সহায়তের জন্য রয়েছেন একজন সহকারী সচিব এবং অন্যন্য প্রোগ্রাম অফিসার/লাইব্রেরিয়ান। সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সক্রিয় সহযোগিতামূলক অংশগ্রহণ দ্বারা দক্ষতা ও দ্রুততার সাথে সরকারী কাঠামোর মধ্য থেকেই বি.এন.সি.ইউ. সকল কাজ সম্পন্ন করে থাকে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে ২১ সদস্য বিশিষ্ট বিএনসিইউ’র একটি পূর্ন কমিশন রয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রয়েছে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি স্টিয়ারিং কমিটি। বিএনসিউ’র ৫টি উপ কমিশন (প্রতিটিতে নয় জন সদস্য, সংস্কৃতিতে ১০ জন সদস্য) রয়েছে; যেমন শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, মানবাধিকার এবং গন যোগাযোগ।
ইউনেস্কো সংবিধানের ৭ নং অনুচ্ছেদ দ্বারা ১৬ নভেম্বর ১৯৪৫ সালে জাতীয় কমিশন গঠনের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। মূলত উক্ত সংবিধানের আলোকেই নির্ধারন করা হয়েছিল নিজ নিজ সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করে প্রতিটি দেশেই জাতীয় কমিশনের আদলে একটি প্রতিষ্ঠান থাকবে। উপরিউক্ত অনুচ্ছেদ অনুসারেই বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন গঠিত হয়।
বিএনসিইউ এর কার্যাবলীঃ
বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সংযুক্ত কার্যালয় হিসেবে ইউনেস্কো এবং সংশ্লিষ্ট সরকারী/বেসরকারী প্রতিস্থান/ব্যক্তির মধ্যে লিয়াঁজো স্থাপন এবং সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। আর্থিক ও কারিগরি সুবিধার অর্জনের লক্ষ্যে বিএনসিইউ ইউনেস্কো ও আইসেস্কোতে প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণ করে থাকে। ইউনেস্কো পার্টিসিপেশন প্রোগ্রাম দ্বারা প্রস্তাবিত প্রকল্পসমূহের যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তত্ত্বাবধান করে থাকে। আইসেস্কোর ক্ষেত্রেও বিএনসিইউ একই ভুমিকা পালন করে থাকে। ইউনেস্কো, আইসেস্কো ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায়, বিএনসিইউ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার ও সন্মেলনের আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন স্কলারশিপ/ফেলোশিপ/প্রাইজ/এওয়ার্ড সমূহের প্রাপ্ত তথ্য ও সংবাদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান/ব্যাক্তি কে মনোনয়ন প্রদান ও তা প্রাপ্তিতেও বিএনসিইউ সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও বিএনসিইউ এসোসিয়েটেড স্কুল প্রোজেক্ট নেটওয়ার্ক (এএসপিনেট) প্রোগ্রাম, ইউনেস্কো কূপন প্রোগ্রাম পরিচালনা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ব শিক্ষক দিবস, আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস, বিশ্ব সংবাদপত্র স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি) করে থাকে। বিএনসিইউ’র সহকারী সচিব প্রতিটি শাখার কার্যাবলির সমন্বয় সহ সাচিবিক সকল কাজে কমিশন সচিবকে সহায়তা করে থাকেন। প্রতিটি শাখার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন এক একজন প্রোগ্রাম অফিসার (পিও) যারা নিজ নিজ ডেস্ক অনুযায়ী প্রশাসন ও অর্থ, ইউনেস্কো ও সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্কলারশিপ/ফেলোশিপ, আইসেস্কো ও বিজ্ঞান, তথ্য, যোগাযোগ ও লাইব্রেরী ইত্যাদি শাখাসমূহের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বিএনসিইউ এর উল্লেখযোগ্য কার্যাবলীঃ
ইউনেস্কো/আইসেস্কো সংক্রান্ত কার্যাবলীঃ
ইউনেস্কো/আইসেস্কো জেনারেল কনফারেন্স ও নির্বাহি বোর্ডের সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও বক্তব্যের খসড়া প্রস্তুত সহ, এতৎসংক্রান্ত কার্যাবলি ইউনেস্কো/আইসেস্কো ডেস্ক কর্মকর্তা পালন করে থাকেন। ইউনেস্কো/আইসেস্কো জেনারেল কনফারেন্স ও নির্বাহি বোর্ডের সভায় গৃহীত রেজুলেশনের বাস্তবায়ন, ইউনেস্কো সদর দপ্তর/ ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের নির্ধারিত চাঁদা প্রদান, পার্টিসিপেশন প্রোগ্রাম সমূহ ইউনেস্কো ডেস্ক অফিসার কর্তৃক এবং আইসেস্কো সংক্রান্ত একই কার্যাবলি আইসেস্কো ডেস্ক অফিসার কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে থাকে।
পার্টিসিপেশন প্রোগ্রামঃ
ইউনেস্কো তার সদস্যভুক্ত দেশ সমূহের শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং তথ্যের উন্নয়নে সরকারি/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে। ইউনেস্কো সদর দপ্তর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করে বিএনসিইউ উক্ত অর্থ প্রাপ্তি ও ছাড়করনের ক্ষেত্রে সকল আনুষ্ঠানিক কর্ম প্রক্রিয়া সম্পাদন করে থাকে। কোন প্রতিষ্ঠান অনুদান পাওয়া মাত্র ইউনেস্কো সদর দপ্তর ও সরকারের পক্ষে উক্ত প্রকল্প তদারকি ও সম্পাদনে বিএনসিইউ কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে। ইউনেস্কো দ্বিবার্ষিক পার্টিসিপেশন প্রোগ্রাম ২০১২-১৩ এর আওতায় অনুমোদিত ৭টি প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। ইউনেস্কো দ্বিবার্ষিক পার্টিসিপেশন প্রোগ্রাম ২০১৪-১৫ এর আওতায় আরও অনুমোদিত ০৫ টি প্রকল্প প্রস্তাব সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে।
ইউনেস্কো কূপন প্রোগ্রামঃ
ইউনেস্কো কূপন ইউএস ডলারে মূল্যায়িত হয়ে থাকে। দেশীয় মূল্যমানে ইউনেস্কো কূপন ক্রয়ের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ, গবেষণাকর্মী এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ দেশের বাইরে উক্ত কুপন ব্যবহার করে বৈদেশিক কেনাকাটা করতে পারেন। শিক্ষা, বিজ্ঞান বা সাংস্কৃতিক উদ্দ্যেশে বিদেশী প্রকাশনা, চলচ্চিত্র ও অন্যান্য বস্তু বিনা শুল্কে ইউনেস্কো কূপন দ্বারা সংগ্রহ করা যায়। ইউনেস্কো কূপন সরবরাহের ক্ষেত্রে বিএনসিইউ একমাত্র স্বীকৃত সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সাথে এটি ইউনেস্কো কূপন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
স্কলারশিপ ও ফেলোশিপঃ
ইউনেস্কো ও আইসেস্কো ভিত্তিক বিভিন্ন স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ যথাযথভাবে প্রচারের মাধ্যমে দেশের যোগ্য নাগরিককে তাতে আবেদন, অংশগ্রহণ ও প্রাপ্তিতে বিএনসিইউ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রাইজ ও এ্যাওয়ার্ডঃ
ইউনেস্কো ও আইসেস্কো ভিত্তিক প্রাইজ ও এ্যাওয়ার্ড এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হতে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন ও মনোনয়ন দেবার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে বিএনসিইউ যোগাযোগ করে থাকে। পরবর্তিতে তাতে আবেদন, অংশগ্রহণ ও প্রাইজ/এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তিতে বিএনসিইউ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে।
শিক্ষা সম্পর্কিত কার্যাবলিঃ
ইউনেস্কো বর্তমানে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে সারা বিশ্বেই শিক্ষা সম্পর্কিত সকল বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএনসিইউ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে নানান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইএফএ সংক্রান্ত কর্মসূচি যেমনঃ এডুকেশন ফর অল (ইএফএ), এডুকেশন ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (ইএসডি) ইত্যাদি। এছাড়াও আইসিটি ইন এডুকেশন, টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং প্রোগ্রাম (টিভেট) ইত্যাদি নানান কর্মসূচিও বিএনসিইউ পালন ও বাস্তবায়ন করে থাকে।
গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডঃ
উন্নয়নের লক্ষ্যে বিএনসিইউ ইউনেস্কোভিত্তিক শাখাসমূহের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে থাকে। পূর্বেই বলা হয়েছে যে বিএনসিইউ চিন্তা ও ধ্যান ধারণার গবেষণাগার, মানদণ্ড নিরূপণকারী, ক্লিয়ারিং হাউস, নীতি নির্ধারন বিষয়ক পরামর্শ প্রদান, বিশ্বব্যাপী জাতীয় কমিশনগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নোয়ন ও এর সক্ষমতা বৃদ্ধি কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে। ফলে এটি ইউনেস্কোর ক্ষেত্র অনুযায়ী বিভিন্ন পারস্পরিক সহযোগিতার পথ উন্মোচনের লক্ষ্যে সর্বদাই সচেষ্ট রয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের উন্নয়নের জন্য ইউনেস্কো, আইসেস্কো ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায়, বহুবছর ধরে বিএনসিইউ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার ও সন্মেলনের আয়োজন করে আসছে।
এসোসিয়েটেড স্কুলস প্রোজেক্ট নেটওয়ার্ক (এএসপিনেট):
এএসপিনেট ইউনেস্কো ভিত্তিক একটি স্কুল নেটওয়ার্কিং কার্যক্রম। ইউনেস্কো এসোসিয়েটেড স্কুলসমূহ শিক্ষার আদর্শ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবার লক্ষ্যে বিভিন্ন পাইলট প্রকল্পসমূহ পরিচালনার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান জটিল ও আন্তঃনির্ভরশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিশু ও যুবকদের প্রতিনিয়ত প্রস্তুত করে তোলে। সৃজনশীল শিক্ষার ধারনা, পদ্ধতি ও উপকরনসমূহের উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষাকে স্থানীয় হতে বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে ক্লাসের বাইরেও এএসপিনেট ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দের এক সাথে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে ৭০ দশকের শেষের দিকে ২০ টি অনুমোদিত স্কুলের সমন্বয়ে এএসপিনেট কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থিত ৪০ টি তালিকাভুক্ত স্কুলের মাধ্যমে বিএনসিইউ এএসপিনেট কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এএসপিনেট বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়কারীর দায়িত্বে রয়েছেন বিএনসিইউ সচিব জনাব মোঃ মনজুর হোসেন। এএসপিনেট কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবস সমূহের পালন/উদজাপন করা, দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, এএসপিনেট কার্যক্রমে ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দকে অংশগ্রহনে উদ্বুদ্ধ্ব করা ইত্যাদি।
তথ্য ও যোগাযোগঃ
শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বিএনসিইউ ইউনেস্কোর এক গুরুত্বপূর্ন তথ্যকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে থাকে। বিএনসিইউ লাইব্রেরী ইউনেস্কো সংক্রান্ত জার্নাল, সাময়িকী, জাতীয় কমিশনসমূহের কার্যক্রম সংক্রান্ত রিপোর্ট, কুরিয়ার, প্রকাশনা, সিএএস বুলেটিন ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে থাকে। বিএনসিইউ’র নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট আছে যাতে উক্ত তথ্যাদির হালনাগাদ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার ও সন্মেলনের রিপোর্ট সংরক্ষণ করে থাকে। ই-ক্যাটালগিং করা বিএনসিইউ লাইব্রেরীতে ১৩০০০ বেশি বই সরক্ষিত আছে। যেকেউ বিএনসিইউ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কাঙ্খিত তথ্য পেতে পারেন। বিএনসিইউ ওয়েবসাইটে বিভিন্ন প্রকল্পসমূহের সংবাদ, স্কলারশিপ/ফেলোশিপ/প্রাইজ/এওয়ার্ড সমূহের তথ্য প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন সম্পাদিত ২০১৫ সালের বিভিন্ন কার্যাবলীর বিবরনঃ
ইউনেস্কোর ৭০ তম বার্ষিকীকে সামনে রেখে বিএনসিইউ চমৎকারভাবে ২০১৫ সাল অতিবাহিত করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে ধারাবাহিক সভার পরে ইউনেস্কো ঢাকা এর সহায়তায় বিএনসিইউ একুশে বই মেলা উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে ইউনেস্কো প্রকাশনা প্রদর্শনের জন্য একটি স্টল প্রদান করে। এছাড়াও ইউনেস্কোর ৭০ তম বার্ষিকী ও ২১ ফেব্রুয়ারী উপলক্ষ্যে এসপিনেট স্কুল ও বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সন্তানদের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে এক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ তারিখে। বিএনসিইউ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
মহান ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরূত্বপূর্ন অর্জন। বস্তুত এই ঘোষণার সাথে বিএনসিইউ এর প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ উপলক্ষ্যে ভাষা শহীদদের সন্মান জানানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর বিএনসিইউ শহীদ মিনারে পুস্প স্তবক অর্পণ করে। প্রতি বছরের মতো এবারও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনসিইউ এর সচিবের নেতৃত্বে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগ এবং বিশ্বময় মাতৃভাষার মর্যাদার স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ইউনেস্কো মহান ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে যা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরূত্বপূর্ন অর্জন। ইউনেস্কোর এই ঘোষণার প্রতি সম্মান জানানো এবং বিপন্ন ভাষাসমূহের রক্ষণাবেক্ষণের মহান দায়িত্ব নিয়ে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট। বিএনসিইউ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটকে ইউনেস্কো ক্যাটাগরি-২ সেন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বহুদিন ধরে কাজ করেছে। সর্বশেষ ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডের ১৯৭ তম সভায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটকে ইউনেস্কো ক্যাটাগরি-২ সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিএনসিইউ এক্ষেত্রে সকল সহায়তা প্রদান করেছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে বিএনসিইউ প্রতি বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে। আইসেস্কোর সহায়তায় বিএনসিইউ ০৫-০৯ জুলাই ২০১৫ তারিখে National Training Session for BNCU Staff on Financial Management, Dhaka, Bangladesh শীর্ষক এমন একটি প্রশিক্ষণের সফল আয়োজন করেছে।
ইউনেস্কো দ্বিবার্ষিক পার্টিসিপেশন প্রোগ্রাম ২০১৪-১৫ এর আওতায় অনুমোদিত সরকারী/বেসরকারী ০৫ টি প্রকল্প কার্যক্রম বিএনসিইউ এর সহায়তায় সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। বিএনসিউ এর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মনিটরিং অফিসারগণ প্রকল্প এলাকাসমূহ পরিদর্শণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সমাপ্তকরনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
বিএনসিইউ এবং কোরিয়া ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের যৌথ উদ্যোগে ভোলার দৌলতখান থানার চরখলিফা ইউনিয়নে বয়স্কদের সাক্ষরতা বিষয়ক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত উক্ত প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় প্রশাসন, ভোলা। স্থানীয় নিরক্ষর বয়স্ক মহিলাগণের জন্য পরিচালিত উক্ত প্রকল্পের কার্যক্রম সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে।
২৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে, বিএনসিইউ, ইউনেস্কো ঢাকা এর সহায়তায় EFA Global Monitoring Report 2015, EFA 2015 National Review-Bangladesh and Presentation on Incheon Declaration শীর্ষক রিপোর্ট এর উদ্ভোধন করে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এস.ডি.জি-৪)কে সামনে রেখে নূতন শিক্ষা এজেন্ডা “এডুকেশন ২০৩০” নিয়ে আলোচনার একটি প্লাটফর্ম হিসেবে নীতি নির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আলোচিত উক্ত ফোরাম বাংলাদেশের শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণে এক গূরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। মূলতঃ মে ২০১৫ ওয়ার্ল্ড এডুকেশন ফোরাম, কোরিয়া থেকে সম্পাদিত ইঞ্চন ডিক্লারেশন, অক্টোবর ২০১৫ দিল্লীতে অনুষ্ঠিত উপ-আঞ্চলিক সন্মেলন এবং নভেম্বর ২০১৫ ব্যাংকক এ অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক সভা পরবর্তী কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় জাতীয়ভাবে উক্ত ফোরাম আয়োজনের বিষয়টি নির্ধারিত হয়।
স্বাক্ষরতা ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ক্ষেত্রে আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার কথা বিবেচনা করে আইসেস্কোর সহায়তায় বিএনসিইউ ২৮-২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে National Workshop on the Use of ICTs in Literacy and Non-Formal Education শীর্ষক একটি জাতীয় কর্মশালার সফল আয়োজন করে।
শূন্য পদে নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০১৫ সালে হিসাবরক্ষকের ০১ টি শূন্য পদ, কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক (Typist) এর ০১ টি শূন্য পদ ও অফিস সহায়কের ২ টি শূন্য পদে নিয়োগ প্রদান সম্পন্ন হয়েছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে বিএনসিইউ’র কর্মকর্তা/কর্মচারিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ২০১৫ সালে বিএনসিইউ এর তিনজন কর্মকর্তা বিএসটিডি ও দুজন কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক (Typist) ব্যানবেইসে ‘Training course on Computer Basics and Productivity’ শীর্ষক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে (২০১৪-১৭) ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডের সদস্য। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের খরচ বহনসহ প্রচারণামূলক যাবতীয় কর্মকান্ডে বিএনসিইউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ফলে ইউনেস্কোর প্যারিসে অনুষ্ঠিত নির্বাহী বোর্ডের সকল সভায় অংশগ্রহণের নিমিত্ত বাংলাদেশের করনীয় যাবতীয় কার্যাবলী বিএনসিইউ সম্পন্ন করে থাকে। উক্ত কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে মাননীয় মন্ত্রী ও বিএনসিইউ এর চেয়ারম্যান জনাব নূরুল ইসলাম নাহিদ এমপি এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ইউনেস্কোর ৩৮ তম সাধারন সভায় অংশগ্রহণ করে । এক্ষেত্রে বিএনসিইউ সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করে।
মাননীয় মন্ত্রী ও বিএনসিইউ এর চেয়ারম্যান জনাব নূরুল ইসলাম নাহিদ এমপি এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল নভেম্বর ২০১৫ সালে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত আইসেস্কোর ১২ তম সাধারন সভায় অংশগ্রহণ করে । এক্ষেত্রেও বিএনসিইউ সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করে।
২০১৫ সালে আইসেস্কো’র অর্থায়নে Documentation on Islamic Heritage Sites in Dhaka City শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বিএনসিইউ লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধকরণে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্যাটাগরীর প্রয়োজনীয় বই ক্রয় করা হয়ে থাকে। ২০১৫ সালেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক বই ক্রয় করা হয়েছে ও ওয়েবসাইট হালনাগাদ করা হয়েছে। বর্তমানে বিএনসিইউ লাইব্রেরিতে ১৩০০০ এর বেশি সংখ্যক বই সংরক্ষিত আছে।
ইউনেস্কো কুপন ক্রয়, নবায়ন, বিনিময় সংক্রান্ত কাজ প্রতি বছরের মত এ বছরেও করা হয়েছে।